দির্ঘ ৮ মাসে একটি দূর্ধর্ষ ডাকাতি মামলার কমপ্লিট ডিটেকশন এবং ১৩ জন আন্তঃজেলা ডাকাত দের গ্রেফতার করল পাবনা জেলা পুলিশ

 দির্ঘ ৮ মাসে একটি দূর্ধর্ষ ডাকাতি মামলার কমপ্লিট ডিটেকশন এবং ১৩ জন আন্তঃজেলা ডাকাত  দের গ্রেফতার করল পাবনা জেলা পুলিশ। 



সুত্রঃ ঈশ্বরদী থানার মামলা নং-১৫, তারিখ-১১/০৪/২০২২ইং, ধারা-৩৯৫/৩৯৭ পেনাল কোড, আসামী - অজ্ঞাত।


অত্র মামলার বাদী মোঃ হাফিজুর রহমান রনি(৩৪), পিতা-মোঃ রুহুল আমিন শিকদার, স্থায়ী: গ্রাম- ছোট ঝিলবুনিয়া, উপজেলা/থানা- মোরেলগঞ্জ, জেলা -বাগেরহাট এর মালিকানাধীন ঈশ্বরদী থানাধীন বড়ইচরা দক্ষিণপাড়া সাকিনে তার গরুর খামার হইতে গত ইং ০৮/০৪/২০২২ তাং রাত্রী অনুমান ০১.৩০ ঘটিকার সময় ১০/১২ জন অজ্ঞাতনামা অস্ত্রধারী  ডাকাত দল খামার পরিচর্যাকারী মোঃ সাগরকে অস্ত্রের ভয় দেখাইয়া ও রশি দিয়ে তার হাত-পা বেধে উক্ত খামার হতে মোট ০৭টি গরু (মূল্য অনুমান ১৪ লক্ষ (টাকা) ডাকাতি করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে বাদী ঈশ্বরদী থানায় সুত্র উল্লেখিত মামলা দায়ের করেন।


 পাবনা জেলার মান্যবর পুলিশ সুপার জনাব মোঃ আকবর আলী মুনসী মহোদয়ের নির্দেশনায় মামলাটি তদন্তকালীন তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও গোপন সুত্রের প্রাপ্ত তথ্য যাচাই বাচাই করে অতিঃ পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) জনাব মোঃ মাসুদ আলম, ইন্সপেক্টর জিন্নাত এবং এসআই অসিতের কুমারের নেতৃত্বে একটি চৌকস টিম ঘটনার ৫-৬ দিনের মাথায় ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত আন্ত জেলা ডাকাত দলের সদস্যদের সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এর পরে কয়েক দফায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। 


প্রথম দফায় (এপ্রিল মাসে) রাজশাহীর কাটাখালি এবং চারঘাট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ডাকাত সদস্য 

১। জাহিদ জয়নাল (৫৫) 

২। সাজ্জাদ (২৮) 

৩। শাহীন (৩৫)

কে গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী চারঘাট এলাকা থেকে ঈশ্বরদী থানার অন্য একটি চুরি মামলার ৩ টি গরু উদ্ধার করা হয়। জাহিদ জয়নাল বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে।



দ্বিতীয় দফায় (মে মাসে) গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ, বগুড়া, নাটোর, রাজশাহী জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে অত্র মামলার ঘটনার সহিত সরাসরি জড়িত আন্তঃ জেলা ডাকাত চক্রের মোট ০৫ (আট) জন নিম্ম বর্ণিত ডাকাতদের ১ টি আগ্নেয়াস্ত্র সহ গ্রেফতার করা হয়।


১. মোঃ সামিউল ইসলাম (৩০) পিতা-মোঃ চিনু মিয়া, থানা-গোবিন্দগঞ্জ, জেলা-গাইবান্ধা।

তার বিরুদ্ধে ডাকাতি সহ মোট ৫ টি মামলা রয়েছে। সামিউল আপদকালীন অন্যান্য ডাকাতদের দাদন দিয়ে থাকেন এবং তিনি ২ টি ট্রাকের মালিক। তার ট্রাকে করেই মূলতঃ ডাকাতি/চোরাই গরু পরিবহন করা হয়। গরু ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত তার ট্রাকটি উদ্ধার করা হয়। তিনি রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া এলাকায় ডাকাতির নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন।



২. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (৪০), পিতা-মধু মিয়া, থানা-পলাশবাড়ী, জেলা-গাইবান্দা। 

তার বিরুদ্ধে ডাকাতি সহ মোট ২৫ টি মামলা রয়েছে। জাহাঙ্গীর আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের সক্রিয় সদস্য। গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকায় ভাসমান অবস্থায় থাকেন।


৩. মোঃ মেহেদুল @ মিদুল (২৯), থানা-শিবগঞ্জ, জেলা-বগুড়া।

(তার বিরুদ্ধে ডাকাতি সহ মোট  ৫ টি মামলা রয়েছে)। 


৪.  মোঃ লিমন মিয়া (২২), থানা-গোবিন্দগঞ্জ, জেলা-গাইবান্ধা। 

ট্রাক চালক এবং তার বিরুদ্ধে ডাকাতি সহ ২ টি মামলা রয়েছে)। 


তৃতীয় দফায় (জুলাই মাসে) রাজশাহী, নাটোরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উক্ত ডাকাতি ঘটনার সাথে জড়িত ৩ জন নিম্নবর্নিত ডাকাত দের গ্রেফতার করা হয়। 



১. আব্দুর রহিম @ বাবু (২২)

ঈশ্বরদী, পাবনা।

বাবু মূলতঃ এই ডাকাত গ্রুপের নেতা। সে গাইবান্ধা, বগুড়া ও গাজীপুর এলাকার ডাকাতদের মধ্যে সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণের কাজ করে। সে কুখ্যাত ডাকাত জাহিদ জয়নালের ছেলে। তার নামে ১০-১২ টি চুরি/ডাকাতি মামলা রয়েছে।


২. মোঃ ফরিদ (২০), থানা-কাটাখালি, জেলা-রাজশাহী।

তার বিরুদ্ধে ডাকাতি সহ মোট ৫ টি মামলা আছে। 


এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত ৩ দফায় অভিযান পরিচালনা করা হলেও খামার থেকে ডাকাতি হওয়া গরুগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। কারণ ধৃত ডাকাত রা খুবই ধূর্ত ও পেশাদার হওয়ায় বার-বার মিসগাইড করেছে। অবশেষে জট খোলে ডাকাত সর্দার বাবু বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় যখন জবানবন্দি প্রদান করে। বাবুর জবানবন্দি থেকে আমরা জানতে পারি যে, গরুগুলো ডাকাতি করে তারা ট্রাকে করে ঈশ্বরদী থেকে সোজা গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় যায় এবং সেখানে তাদের অপর সদস্য কসাই বাদশা, সোহেল, শামীম এবং সুলতান দের কাছে ৮ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দেয়। যদিও মাত্র ২ লক্ষ টাকা দিয়ে ডাকাত বাবু, সামিউলদের বিতাড়িত করে দেয়। কসাইরা ১০ এপ্রিল ৪ টি গরু জবাই করলেও নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় স্থানীয় মৌচাক ফাড়ি বাকি ৩ টি গরু উদ্ধার করে। পরবর্তীতে প্রকৃত মালিক না পাওয়ায় নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে দেন। বিক্রয়ের ৩ লক্ষ টাকা রাষ্টীয় কোষাগারে জমা রাখা হয়।



উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে চতুর্থ ও শেষ দফায় গত ২ ডিসেম্বর ইন্স জিন্নাত এর নেতৃত্বে ডিবির একটি চৌকস দল কালিয়াকৈরে অভিযান পরিচালনা করে 

১। কসাই বাদশা

২। কসাই সোহেল

৩। সুলতান ও 

৪। শামীম কে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করলে সকলেই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।


এভাবে পাবনা জেলা পুলিশ টিম গত ৮ মাসে মোট ৪ টি অভিযান পরিচালনা করে আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের মোট ১৩ জন কে গ্রেফতার করে একটি দূর্ধর্ষ ডাকাতি ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়। এই ডাকাত দল এতই বেপরোয়া ছিল যে এমন কোন দিন নেই যে তারা কোন চুরি বা ডাকাতির ঘটনা ঘটান নাই।


জব্দকৃত মালামালঃ

১। ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত ১ ট ট্রাক

২। ১ টি আগ্নেয়াস্ত্র ওয়ান শুটারগান

৩। ঈশ্বরদী থানার অন্য একটি গরু চুরির মামলায় ৩ টি গরু উদ্ধার এবং 

৪। অত্র ডাকাতি ঘটনার ৩ টি গরুর নিলামকৃত অর্থ ৩ লক্ষ টাকা।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url