জয়পুরহাট জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) কর্তৃক অবৈধভাবে কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের আরও ০৩ জন মূল হোতা/দালাল গ্রেফতার

 


জয়পুরহাট জেলার কালাই থানা এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ অসহায় ও গরীব প্রকৃতির লোকজন (পুরুষ/ মহিলা) দের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে একটি সংঘবদ্ধ দালাল চক্র মোটা অংকের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে মানবদেহের কিডনি বিক্রয়ে প্রলুব্ধ করে। প্রতারণার শিকার ভিকটিমরা পরবর্তীতে দালালে পরিনত হয় এবং তাদের আত্নীয়-স্বজনসহ এলাকার নিরীহ গরীব লোকজনদেরকে কিডনি বিক্রয়ের জন্য বিভিন্ন প্রলোভন দেখায় এবং তাদের অভাব অনটনের সুযোগ নিয়ে দালাল চক্রের সক্রিয় সদস্য প্রাথমিক অবস্থায় ভিকটিমদের ১৫,০০০-২০,০০০/- টাকা পর্যন্ত ধার/ সুদের উপর দেয়। কিছু দিন পরে পরিকল্পনা মোতাবেক টাকা ফেরত চায় এবং টাকা ফেরত দিতে না পারলে কিডনি বিক্রয়ের জন্য বাধ্য করে। পরবর্তীতে সংঘবদ্ধ দালাল চক্র কতিপয় অসাধু ডাক্তারের মাধ্যমে ভিকটিমদের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা অন্তে দেশের অভ্যন্তরে এবং দেশের বাহিরে পাঠিয়ে দিয়ে তাদের কিডনি অপসারণ করায়। অতঃপর ভিকটিমকে নাম মাত্র চিকিৎসা শেষে তাদের হাতে ১,০০,০০০/২,০০,০০০ টাকা দিয়ে সারা জীবনের মতো অঙ্গহানী করে দেশে পাঠিয়ে দেয়। এই চক্রটি তিনটি স্তরে কাজ করে।


প্রথম স্তরে আছে একেবারে স্থানীয় পর্যায়ের কিছু অর্থলোভী, যাদের কাজ এলাকার বিভিন্ন অসহায় ব্যক্তিদের টার্গেট করা এবং মোটা অংকের টাকার লোভ দেখিয়ে প্রলুব্ধ করা এবং তাদের ফাঁদে পা দেয় বা রাজি হয় এমন ভিকটিমদেরকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে চক্রের দ্বিতীয় স্তরের সদস্যদের সহিত সমন্বয় অন্তে তাদের নিকট হস্তান্তর করে। দ্বিতীয় স্তরের সদস্যরা ভিকটিমদের ঢাকা শহরে থাকা, খাওয়া বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পাসপোর্ট ভিসাসহ আনুষঙ্গিক কাগজপত্র প্রস্তুত অন্তে এই চক্রের তৃতীয় স্তরের চক্রের নিকট হস্তান্তর করে। এই চক্রের তৃতীয় স্তরের সদস্যরা ভিকটিমদের দেশে ও দেশের বাহিরে বিশেষ করে ভারত ও দুবাইতে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তাদের সুবিধামত সময়ে ভিকটিমদের শরীর থেকে কিডনী অপসারণ করায়। উল্লেখ্য যে, তৃতীয় স্তরের সদস্যদের মধ্যে কিছু অসাধু ডাক্তার ও ক্লিনিক জড়িত আছে। এই দালাল চক্রকে সনাক্ত করার জন্য জেলা পুলিশ, জয়পুরহাট গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে। কিডনি দালাল চক্রকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে ডিবি, জয়পুরহাট-এর একটি চৌকশ অভিযানিক দল ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে আসছে।

এরই ধারাবাহিকতায় এ চক্রের অন্যতম সদস্য ১। মোঃ ফুল মিয়া @ রানা @ জুয়েল (৪২), পিতা-মৃত নজরুল ইসলাম, সাং-সরাইল, থানা-কালাই, জেলা-জয়পুরহাট, ২। মোঃ জুয়েল রানা (২৮), পিতা-মোঃ আঃ কাদের, সাং-লক্ষিচাপর, থানা-কালাই, জেলা-জয়পুরহাট, ৩। মোঃ ফিরোজ হোসেন (৩৯), পিতা-মোঃ মোখলেছুর রহমান, স্থায়ী সাং-ছত্রগ্রাম, থানা-কালাই, জেলা-জয়পুরহাট, বর্তমান সাং-হাটুভাঙ্গা, থানা ও জেলা-জয়পুরহাটদেরকে ইং ২০/৭/২০২২ তারিখ গ্রেফতার করা হয়। উল্লেখ্য যে, তারা ভিকটিম ১। মোঃ রায়হান মন্ডল (৩৭), পিতা-মৃত আঃ সাত্তার, ২। মোছাঃ মোসলেমা বেগম (২৫), স্বামী-মোঃ রায়হান মন্ডল, উভয় সাং-পূর্ব সরাইল, থানা-কালাই, জেলা-জয়পুরহাটদ্বয় চট্রগ্রামে বসবাসরত জনৈক ব্যক্তির নিকট কিডনি দেওয়ার জন্য ভিকটিমদ্বয়কে ভারতে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলে কালাই থানাধীন পুনট বাসস্ট্যান্ড থেকে ভিকটিমদ্বয়কে উদ্ধার ও আসামীদের গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে আসামী মোঃ ফুল মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ইতোপূর্বে ভিকটিম মোঃ লিটন, হিন্দা, মোঃ জাক্কা, দুর্গাপুর ও রাজু, দের কিডনি অপসারণের জন্য ভারতে পাঠিয়ে দিয়ে তাদের কিডনি অপসারণ করায় এবং ভিকটিম মোঃ আনিছুর রহমান এবং তার স্ত্রী, সাং- পুনট শান্তিনগর, কালাই কিডনি অপসারণের লক্ষ্যে ভারতে অবস্থান করছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে মামরা রুজু প্রক্রিয়াধীন। তাছাড়া এ চক্রের অন্যান্য সদস্যদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহপূর্বক গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান অব্যাহত আছে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url